বহিষ্কৃত এবং পদচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরেছেন। বিমানবন্দর ত্যাগ করে ধানমণ্ডির বাসভবনের উদ্দেশে গেছেন লতিফ সিদ্দিকী। রোববার রাত ৯টা ২৬ মিনিটে তিনি ইমিগ্রেশনের সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে পুলিশ প্রহরায় একটি প্রাইভেট কারে করে সেদিকে যান। একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় যেকোনো মুহূর্তে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।তবে একাধিক গ্রেফতারী পরত্তয়ানা থাকার পরও কেনো তাকে বিমান বন্দরে আটক করা হয়নি এনিয়ে জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
এর আগে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান লতিফ সিদ্দিকী। এরপর তিনি চামেলি ভিআইপি লাউঞ্জে ক্লিয়ারেন্সের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
তবে কোনো নির্দেশনা না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না বলে জানা গেছে। স্পিকার ও সরকারের শীর্ষস্থানীয় থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেলেই লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে।এসময় তাকে গোয়েন্দা ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ঘিরে রাখে। তাকে গ্রেপ্তার করা হবে নাকি বিদেশে ফিরিয়ে দেয়া হবে এ নিয়ে চলে আলোচনা। এসময় লতিফ সিদ্দিকী ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তখন সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পুলিশ প্রহরাতেই তিনি ভিআইপি গেট এড়িয়ে পাবলিট গেট দিয়ে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা হন।
এদিকে বিমানবন্দরে অবতরণের পর যখন লতিফ সিদ্দিকী ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করছিলেন তখন এক যাত্রী তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এতোগুলো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আপনি দেশে ফিরলেন, কিছু হবে না?’ তখন লতিফ সিদ্দিকী স্বাভাবিকভাবে বলেন, ‘কেন? আমি তো এদেশেরেই নাগরিক।’
আরো জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, তাকে মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি এখনো সংসদ সদস্য আছেন। সুতরাং সেই অধিকারেই তিনি সোমবার অধিবেশনে যোগ দেবেন।
বিশেষ সংস্থার লোকজন নিয়ে গেছে লতিফ সিদ্দিকীকে’: কাদের সিদ্দিকী
সাদা পোশাকে সরকারের বিশেষ সংস্থার লোকজন প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে গেছে এমন অভিযোগ করেছেন তার ভাই কাদের সিদ্দিকী।
তিনি বলেছেন, সরকারের এত লোকজন থাকতে কীভাবে লতিফ সিদ্দিকী বিমানবন্দর থেকে বের হলেন।
তিনি আরো বলেন, লতিফ সিদ্দিকী দেশে থাকাকালীন ধানমন্ডির ১২ রোডের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। এ ছাড়া সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর ওই ভাড়া বাসা ছেড়ে দেন তিনি। আর হেয়ার রোডের সরকারি বাসাও তার দখলে নেই। হঠাৎ করে তিনি কোথায় যাবেন। তার যাওয়ার কোনো পথ নেই । অতএব সরকারের লোকজনের হেফাজতেই লতিফ সিদ্দিকী রয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।রোববার রাত ১১টার দিকে কাদের সিদ্দিকী রাইজিংবিডিকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লতিফ সিদ্দিকী ঠিক কোথায় আছেন তা কেউ জানেন না। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও তিনি কীভাবে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বের হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, লতিফ সিদ্দিকী সম্ভবত বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ এলাকা দিয়ে বের হয়ে গেছেন। তবে সরকারের একাধিক সংস্থা তাকে খুঁজছেন।
কাদের সিদ্দিকীর অভিযোগ অস্বীকার করে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর মেট্টোপলিটন পুলিশের (মিডিয়া) উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, লতিফ সিদ্দিকীকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আটক করেনি। তবে তাকে যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।