ভিন্নমতাবলম্বী প্রতিপক্ষের তথ্য পেতে ফেসবুক এবং গুগলের সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ সরকারেরঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং সার্চ ইঞ্জিন গুগলের এ দেশে কোনও অফিস এবং কোনও ধরনের পরিকাঠামো চুক্তি (ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট) না থাকায় সরকারকে কোনও ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে না প্রতিষ্ঠান দুটি।
সম্প্রতি সরকার ১৭ জনের তথ্য ফেসবুকের কাছে চেয়ে পাঠালে সামাজিক এ যোগাযোগ মাধ্যমটি জানিয়েছে তারা কোনও ধরনের তথ্য দেবে না। তারা 'গ্রাহক বা ব্যক্তির সুরক্ষা' দিতে বদ্ধ পরিকর। এ কারণে তারা কোনও তথ্য দেয়নি সরকারকে।
অথচ পাশের দেশ ভারত এ বছর ৯ হাজার ব্যক্তির তথ্য চেয়ে চিঠি দিলে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি অাইডির তথ্য দিয়েছে ফেসবুক। এমনকি খোদ মার্কিন সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেও ফেসবুক সেদেশের অসংখ্য অাইডির তথ্য সরবরাহ করেছে।গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬ মাসে সরকার ১৭ জনের তথ্য চেয়ে অাবেদন করে।
বাংলাদেশকে কেন তথ্য দেয়নি তার সুলুক সন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, ভারতে ফেসুবকের একাধিক অফিস রয়েছে। অার যুক্তরাষ্ট্রে তো ফেসবুকের সদর দফতর। যে দেশে ফেসবুকের অফিস রয়েছে সে দেশের অাইন মেনে কাজ করতে হয় ফেসবুককে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফেসবুকের রয়েছে 'ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট'। বাংলাদেশের সঙ্গে এর কোনওটিই নেই। ফলে ফেসবুক সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কোনও কূল-কিনারা পাচ্ছে না সরকার।
গুগলের বিরুদ্ধেও এন্তার অভিযোগ আছে বাংলাদেশ সরকারের। বিভিন্ন সময়ে গুগলে থাকা 'স্পর্শকাতর কনটেন্ট' সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কোনও অাবেদনে সাড়া দেয়নি গুগল। কোন তথ্য গুগল এবং ইউটিউবে (গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) একবার অাপ করা হলে তা কখনোই সরিয়ে নেয় না প্রতিষ্ঠানটি। এটি তাদের নীতি-বিরুদ্ধ বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এসব কারণে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের জন্য প্রস্তাব পাঠাবে। ফেসবুক ও গুগল রাজি হলেই ওই চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিঅারসির ১৭৪তম কমিশন বৈঠকে এ বিষয়ে অালোচনা হয়েছে। বৈঠকের এজেন্ডায় ছিল বিষয়টি। বৈঠকের অালোচনায় চুক্তি এবং চিঠি পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক মতামত পড়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিঅারসির সচিব ও পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) সারোয়ার অালম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অামরা ফেসবুক ও গুগলের কাছে প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠাব। কমিশন বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। রবিবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অবগতিও করা হয়েছে।
তিনি জানান, দেশে ফেসবুক এবং গুগলের অ্যাডমিন প্যানেল স্থাপনের বিষয়ে দু'একদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে চিঠি পাঠানো হবে।
তিনি অারও বলেন, প্রস্তাব পাঠানো হলে ফেসবুক ও গুগল প্রস্তাব পর্যালোচনা করে ইতিবাচক মনে করলে সেটি অামাদের ফেরত পাঠাবে। তখন অামরা তাদের দেওয়া যুক্তিসঙ্গত 'শর্ত' মেনে তাদেরও কিছু শর্ত দিয়ে কাছাকাছি একটা প্লাটফর্মে পৌঁছাতে পারলেই হয়তো চুক্তি হতে পারে।
তিনি জানান, চুক্তি হওয়ার পরও ফেসবুক এবং গুগল কোনও তথ্য দিয়ে সহায়তা না করলে বাংলাদেশ তখন অাইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে।
এদিকে বিটিঅারসি সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়ছে কমিশনে। তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত যত অভিযোগ জমা হচ্ছে তার ৭৫ শতাংশেরও বেশি ফেসবুকের বিরুদ্ধে। এর পরেই রয়েছে ইউটিউব, বিভিন্ন ব্লগ ও পর্নো সাইট।
জনসাধারণের ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং জাতীয় যে কোনও সাইবার অপরাধের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে বিটিআরসির অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিডিসার্ট)। এই টিম দেশে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে কাজ করছে।
বিডিসার্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হওয়ার হার অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিডিসার্টে ৬০টি অভিযোগ জমা পড়ে যার ৭৫ শতাংশই ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
এপ্রিলের পরেও অভিযোগ জমা পড়েছে। এই হার গত বছর এই সময়ের তুলনায় বেশি। মে থেকে এখন পর্যন্ত ডাটাবেজ তৈরি না হলেও বিডিসার্ট কর্তৃপক্ষ জানালো, চলতি বছরের শেষ নাগাদ অভিযোগ পড়ার হার অন্যান্য যেকোনও সময়ের রেকর্ড ভেঙে ফেলবে।
সূত্র আরও জানায়, গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিডিসার্টে ৮০টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
বিডিসার্ট সংশ্লিষ্ট বিটিআরসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে জানান, অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ (মোট অভিযোগের) অভিযোগ এসেছে সরকার সংশ্লিষ্ট, ধর্মভিত্তিক প্রচার-প্রচারণা, পর্নোগ্রাফি এবং ব্লগে ধর্ম নিয়ে উস্কানিমূলক লেখালেখি নিয়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেসবুকের বিরুদ্ধে ভুয়া আইডি খোলা, বাজে পোস্ট দেওয়া, বিকৃত ছবি আপলোড করা, অনৈতিক প্রচার চালানো এবং প্রতারণার অভিযোগ এসেছে সবচেয়ে বেশি।
এসবের প্রতিকার চেয়ে সরকারের পক্ষে বিটিঅারসি বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার অভিযোগ জানালেও ফেসবুক এবং গুগল বিষয়টি অামলেই নেয়নি। জানা গেছে, এ দেশে ফেসবুক এবং গুগলের 'বিজনেস' নেই বলেই প্রতিষ্ঠান দুটি এ দেশের ব্যাপারে ততটা অাগ্রহী নয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে চুক্তি করতে এবার অান্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। তবে কোন দেশ এবং কোন ব্যক্তি চুক্তি চূড়ান্ত করতে সহায়তা করবেন তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে ওই সূত্র।