চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থে ‘অভিজ্ঞতা’ সঞ্চয়ের নামে নৌ পরিবহন মন্ত্রীর ঘনিষ্ট আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিন সিবিএ নেতাসহ পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে চীন সফরে পাঠাচ্ছে সরকার। বন্দরের উন্নয়নে অভিজ্ঞা সঞ্চয়ের নামে বিতর্কিত এসব সফর নিয়ে অতীতে নানা সমালোচনা হলেও এবার অবসরে যাওয়ার মাত্র ১০ দিন আগে এলপিআরে থাকা এমন একজন সিবিএ নেতাকে এই প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভূক্ত করায় বন্দরে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
বন্দর সূত্র জানায়, পাঁচ সদস্যের এই দলটি সাত দিনের এই সফরে চীনের দুটি সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন করবেন। ইতোমধ্যে সরকারি খরচে তাদের যাওয়ার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক ব্যয়সহ যাবতীয় ব্যয়ের অনুমোদনও মিলেছে। আগামী রোববার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিনিধি দলের যাত্রার তারিখ চূড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে। তবে ডিসেম্বরের ২ তারিখ এই প্রতিনিধি দলের চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে। এ সফরের যাবতীয় ব্যয় বন্দরের প্রশিক্ষণ খাত থেকে যোগানো হবে বলে জানা গেছে।
চীন সফরে যাওয়া পাঁচ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে থাকছেন- চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম ছরওয়ার, চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ পারসোনাল অফিসার ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম বন্দরের সিবিএ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক মোকারম হোসেন ও দপ্তর সম্পাদক লিয়াকত আলী।
এক বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সিবিএ নেতাকে খুশি করতে মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্মকর্তারা বন্দর পরির্দশন করে অভিজ্ঞতার নামে মূলত আনন্দ ভ্রমণেই তাদের পাঠাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগেও সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, কেনিয়া ও সিঙ্গাপুর সফর করেছে বন্দরের একাধিক প্রতিনিধি দল। এসব ভ্রমণে বন্দরের লাখ লাখ টাকা খরচ হলেও উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না বিশেষ করে সিবিএ নেতারা।
এবারের দলের সদস্যদের অনেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের বন্দর পরিদর্শনে গেছেন। তাই বন্দরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বন্দরের অর্থে এই সফরকে আরেকটি আনন্দভ্রমণ বলে মন্তব্য করেছেন।
এ দলের সদস্য সিবিএর নেতা মমতাজ উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ রয়েছে ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত। অর্থাৎ সফরের সম্ভাব্য দিনের পর মাত্র ১০ দিন তার চাকরি আছে। বর্তমানে তিনি অবসরকালীন ছুটিতে রয়েছেন। ফলে তার চীন সফরের অভিজ্ঞতা বন্দরের কোনো উন্নয়নেই আসবে না বলে মনে করছেন বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এছাড়া বন্দরের টাকায় ২০০৫ সালের জুনে বন্দরের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, মিশর এবং সৌদি আরব সফর করেছিলেন মমতাজ উদ্দিন। একই ব্যক্তি ২০১১ সালেও নৌমন্ত্রীর সঙ্গে আরব আমিরাত ও সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন।
সিবিএ সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের চীন সফর নিয়ে রীতিমত বন্দর ভবনে তোলপাড় চলছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ঘনিষ্ট বলে প্রচার থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার সাহস করছেন না কেউ।
সিবিএ নেতাদের আসন্ন চীন সফরকে অন্তঃসারশূণ্য উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দরের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক অহিদ উল্লাহ সরকার দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিবিএ নেতাদের নিয়ে এই ধরনের বিদেশ সফর বন্দরের কোনো কাজে আসবে না। তাদের খুশি করতে যারা চীন পাঠাচ্ছে তারাই ভালো বলতে পারবে এতে করে বন্দরের কোনো লাভ হবে কি না।’
এলপিআর এ থাকা চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ দিন আগে সিবিএ সভাপতি মমতাজ উদ্দিনকে প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত করায় বন্দরের কী লাভ হবে সে প্রশ্নও রাখেন এ সিবিএ নেতা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বন্দরের সিবিএ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ কে বলেন, ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকেসহ তিনজন সিবিএ নেতাকে চীন সফরে পাঠাচ্ছে। সব কিছু চূড়ান্ত হয়েছে, আশা করছি ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই চট্টগ্রাম ত্যাগ করবো।’
চাকরির শেষ সপ্তাহে এসে এই সফর বন্দরের কোনো কাজে আসবে কি না এমন প্রশ্নে মমতাজ বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে আপনি (প্রতিবেদক) লিখলে আবার আমাদের সমস্যা হয়ে যাবে। তার চেয়ে ভালো হয়, আমরা সফর শেষ করে আসার পর অভিজ্ঞতার ওপর লিখেন।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব আলাউদ্দিন মিয়া দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ কে বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অভিজ্ঞা অর্জনের জন্য ডিসেম্বরের প্রথম দিকে চীন সফরে যাচ্ছেন। সাত দিনের এই সফরে তাদের সে দেশের দুটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর পরিদর্শন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে চট্টগ্রাম বন্দরেরর উন্নয়নে কাজ করবেন।’
অবসরে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে সিবিএ নেতাদের চীন সফরের অভিজ্ঞতা বন্দরের কোনো কাজে আসবে কি না জানতে চাইলে বন্দর সচিব বলেন, ‘এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। মন্ত্রণালয় থেকে সফরের সব কিছু অনুমোদন হয়ে গেছে। বিস্তারিত জানতে হলে অফিসে এসে কথা বলতে হবে।’