জাতীয় পার্টি থেকে বিভিন্ন সময়ে দল ত্যাগ, দল থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন, বহিষ্কৃত এবং বঞ্চিত নিষ্ক্রিয় নেতাদের উপযুক্ত মূল্যায়নের মাধ্যমে দলে ভেড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এদের ফিরিয়ে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। আর বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় বিবেচনা করছেন দলের খোদ চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফলে এই প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সময়ে দল ত্যাগ করা অনেক সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী নেতা আর জাপায় ফিরে আসতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
দলের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
নীতিনির্ধারণী ওইসব নেতারা এও জানিয়েছেন, সেসব নেতারা দলে ভিড়লেই প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবে জাপা। আগামী নির্বাচনে তিনশ আসনের টার্গেট করেছেন দলের চেয়ারম্যান। এজন্য তিনি দলের সাবেক নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন। বিভিন্ন সময়ে ফোনে বা সাক্ষাতে কথা বলছেন।
সূত্র জানায়, বর্তমান বন ও পরিবেশমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টি (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, খুলনার বহিষ্কৃত গোলাম রেজাসহ অন্যান্য দলছাড়া, বহিষ্কৃত ও বিভিন্ন সময়ে গোস্যা করে দলে নিষ্ক্রিয় নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার জন্য এরশাদ যোগাযোগ শুরু করেছেন।
এরশাদের সিদ্ধান্ত, তিনি পুরনো মানুষদের সঙ্গে নিয়েই আবারও দলকে চাঙা করবেন। আগামী নির্বাচনে তিনি কারো সঙ্গে না গিয়ে এককভাবে তিনশ আসনের টার্গেট নিয়ে মাঠে নামতে চান। হতে চান সত্যিকারের বিরোধী দল।
জাপার একটি সূত্র জানায়, গত মাসের আশুরার দিন গোলাম রেজাকে তার বারিধারার বাসায় ডাকেন এরশাদ। সেখানে সেদিন তিনিসহ উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও সোলায়মান শেঠ। তাদের সঙ্গে তিনি ঘণ্টাখানেক আলাপ করেন।
এসময় এরশাদ বলেন, ‘আমার ও তোমার মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তুমি আমার নামে মামলা করেছো। তোমার করা মামলাটা আদালত থেকে প্রত্যাহার কর। দলে ফিরে আগের মতো দলকে শক্তিশালী কর। দলকে চাঙা করবে বাবলু। বাবলুকে এজন্য সহায়তা কর। বাবলু হচ্ছে এই সময়ের যোগ্যতম মহাসচিব। তুমি দলে ফিরলে তোমার প্রেসিডিয়াম পদ ফিরিয়ে দেয়া হবে।’
সেদিন অব্যশ্য গোলাম রেজা এরশাদের এমন প্রস্তাবে হ্যাঁ, না কিছুই বলেননি।
এ ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কথার ফাঁকে স্বীকার করেছেন।
প্রায় দুই বছর আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গোলাম রেজাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কারের পর দল ও দলের চেয়ারম্যান এরশাদকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করেন তিনি। যে মামলাটি এখনো বিচারাধীন। ফলে বেশ চিন্তায় পড়েছেন এরশাদ। তার মামলার কারণে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছে এরশাদকে বিভিন্নভাবে হয়রানি হতে হয়েছে। মামলা থেকে রক্ষা পেতেই এখন রেজাকে দলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।
সোলায়মান শেঠের বিরুদ্ধে করা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং দলে ফিরিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দল থেকে বহিষ্কার হওয়া কয়েক নেতাকে ফিরিয়ে আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন দলের মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু। এজন্য তিনি সম্প্রতি এরশাদকে একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন এবং তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এরশাদও একমত হয়ে তার সঙ্গে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
তবে বাবলু ও এরশাদের এমন সিদ্ধান্তে দলের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাকর্মীরা ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ। তারা বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না।
একজন যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘যারা স্যারকে বিভিন্ন সময়ে অপদস্ত করেছে এবং বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে তাদেরই আবার দলে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চলছে। এমন করা হলে ভবিষ্যতে খারাপ হবে এবং ত্যাগী নেতারা দল থেকে বের হয়ে যেতে পারেন।’
পার্টির কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের অভিযোগ, সারাদেশে জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুর কোনো জনপ্রিয়তা নেই। নেই তার কোনো সাংগঠনিক দক্ষতা। ফলে তিনি তার ঘাটে সেইসব বহিষ্কার এবং বিতর্কিত নেতাদের ভিড়ানোর চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তার অবস্থান সুদৃঢ় হবে বলে তিনি করছেন।
এদিকে গত বছরে নির্বাচনের আগে দল থেকে বের হয়ে যাওয়া সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর গ্রুপের কয়েকজনকে দলে ফেরানোর কথাও শোনা যাচ্ছে।
তবে জাফর গ্রুপের কাউকে ফোন করা হয়নি বলে জানান তার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন।
এছাড়াও জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত যেসব নেতা বের হয়ে গেছেন বা বহিষ্কার হয়েছেন এবং যারা সম্প্রতি দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিব্রত ও বিরক্ত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন তাদেরও ফেরানোর জোর চেষ্টা চলছে।
তবে পুরনোর দলে ফেরানো এবং বহিষ্কৃতদের ফিরিয়ে পদ দেয়ার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। দল গোছাতেই ব্যস্ত আছেন বলে জানান।