ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাট। এই রাজ্যে মানুষের একান্ত ভালোবাসার সম্পর্কগুলোও নাকি শিথিল হয়ে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীতে বিশ্বাসের বালাই উঠে যাচ্ছে। আর এ প্রবণতা শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি! অন্তত জিন পরিসংখ্যান সেরকম চিত্রই দিচ্ছে।
বিষয়টি পরিষ্কা করতে নমুনা হিসেবে ৬০ বছর বয়সী সুকেতু শাহ আর তার মেয়ের গল্পটা নেয়া যেতে পারে।
বাপ-বেটিতে দারুণ ভাব। কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না। সুকেতু তার মেয়েকে নিয়ে গর্বিত। কিন্তু একটা বিষয় বহুদিন ধরেই তার মনের মধ্যে খচখচ করছিল। মেয়ের মায়ের ব্যবহার সন্দেহজনক। ‘আমার মেয়ে’ বলে সুকেতু আহ্লদা করলেই স্ত্রী কেমন জানি উসখুস করেন!
এই সন্দেহ দূর করতে মেয়ের ডিএনএ টেস্টের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করে বসেন সুকেতু। তার পরিবারের তো অবাক। এতো বছর পর লোকটা বলে কী! কিন্তু রিপোর্ট যখন এল তখন তো সবাই তাজ্জব।
মেয়েটি সত্যিই সুকেতু শাহর ঔরসজাত নয়। এই একটি টেস্টই বদলে দিল শাহ পরিবারের যাবতীয় বন্ধন, বিশ্বাস। এখন সুকেতু, তার স্ত্রী ও মেয়ে আলাদা থাকেন। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে সেই শান্তির নীড়।
আজকালকার গুজরাটে এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গান্ধীনগরের ডিরেক্টরেট অব ফরেন্সিক সায়েন্সের (ডিএফএস) ডিএনএ পরীক্ষা বিভাগ জানাচ্ছে, বছরে প্রায় ২৫০টি এ ধরনের মামলা আসে। হয় পুলিশ, না হয় আদালত তাদের কাছে পাঠায় বিভিন্ন কারণে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ অর্থাৎ ২৪৫টি ক্ষেত্রেই ডিএনএ রিপোর্ট নেগেটিভ।
অর্থাৎ সরল অর্থ দাঁড়ায়, পিতৃত্ব নিয়ে সন্দেহের জন্য যারা টেস্ট করাতে আসেন, দেখা যায় তাদের সন্দেহই সঠিক। সন্তান তাদের ঔরসজাত নয়।
যে রাজ্যে সংস্কার, সম্পর্ককে এতটা গুরুত্ব দেয়া হয়, সেখানে এই প্রবণতা অবাক করার মতোই বটে।
এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পর ভারতজুড়ে আলোচনা চলছে, তাহলে কি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গুজরাটেই বেশি?
ডিএফএসের সহকারী পরিচালক শোভা রাও বললেন, ‘অনেক সময়ই বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক হয়, সে সময় নারী গর্ভবতী হন। কিন্তু সেই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হতে পারে না নানা কারণে। বা সেই ব্যক্তি ঠকায় মেয়েটিকে। ফলে গর্ভাবস্থা লুকিয়ে মেয়েকে পাত্রস্থ করা হয় অন্যত্র, ফলে এই জটিলতা তৈরি হয়। অনেক সময় ধর্ষণের মতো অপরাধ থেকেও মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে যায়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের সংখ্যাটাও ফেলে দেয়ার মতো নয়।’
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি প্রথমেই সত্যিটা বলে দেয়া হয়, তাহলে ব্যাপারটি এতো দূর গড়াতো না।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, শহরের চেয়ে গ্রামের লোকেদেরই ডিএনএ পরীক্ষা করানোয় আগ্রহ বেশি।
শোভা রাও বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অর্থনৈতিক কারণেই এই পরীক্ষার প্রবণতা বেশি। সম্পত্তির মামলা, না হয় উইল বা উত্তারাধিকার নিযুক্ত করার সময়ই এসব বিষয়ে মাথাচাড়া দেয়। প্রতি ক্ষেত্রে খরচ হয় ৩৫ হাজার রুপির মতো। খরচ যথেষ্ট বেশি হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকই বেশি আসে।
কিন্তু সরকারি এই সংস্থা কোনও ব্যক্তিগত অনুরোধ রাখে না।
এক ফরেন্সিক কর্তা বলেন, ‘চোখের সামনে একাধিকবার দেখেছি একটা রিপোর্টের ভিত্তিতে কীভাবে ভেঙে যাচ্ছে একটা সাজানো পরিবার। এক মুহূর্তে সব থেকে ভালোবাসার মানুষটা হয়ে যাচ্ছে সব থেকে ঘৃণ্য। মাসের পর মাস ধরে পালন করা শিশুকে ফেলে চলে যাচ্ছেন বাবা। তাই ব্যক্তিগত অনুরোধ রাখা হয় না।’
হিন্দু কট্টপন্থি সংগঠন আরএসএসের সাবেক ও বর্তমান মৌলবাদী হিন্দু দল বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে এই অবস্থা দেখে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক- তাহলে প্রেম-ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস শব্দটাই হারিয়ে যাচ্ছে?