সিরিয়ায় 'জিহাদে' অংশ নিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উসকানি দেয়ার দায়ে রুনা খান (৩৫) নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক নারীকে পাঁচ বছর তিন মাসের কারাদ- দিয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত।
ছয় সন্তানের জননী এই নারী ফেসবুকে বন্ধু ও পরিচিত ব্যক্তিদের ওই 'জিহাদে' অংশ নিতে উসকানি দিচ্ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কিংস্টন ক্রাউন কোর্ট এ দ-াদেশ দেয়।
সিরিয়ায় কথিত জিহাদে অংশ নেয়ার দায়ে গত সপ্তাহে তিন ব্রিটিশ নাগরিককে দ- দিয়েছে যুক্তরাজ্যের আদালত। তারা সিরিয়ায় চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে মাসুদুর চৌধুরী ও মোহাম্মদ আহমদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং ইউসুফ সারওয়ার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রুনা খানের কারাদ- দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উগ্রপন্থার ঝুঁকির বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে।
গত রোববার রুনা খানের এক সাক্ষাৎকার নেয় বিবিসি। আজ এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন সংস্করণে। সেখানে জানানো হয়, সিলেটে জন্ম নেয়া রুনা খান যুক্তরাজ্যের লুটন শহরে বসবাস করছেন। তিন বছর আগে স্থানীয় একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক পদে চাকরি করতেন তিনি। চাকরি হারানোর পর তিনি ইসলামী কট্টরপন্থী হয়ে উঠতে থাকেন।
একই সঙ্গে ফেসবুকে বিভিন্ন জিহাদি ছবি ও স্ট্যাটাস প্রচার করে মানুষকে জিহাদে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। ফেসবুকে নারীদের উদ্দেশে তিনি লেখেন, যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন, তারা যেন তাদের স্বামী, সন্তান ও বন্ধুদের 'জিহাদে' পাঠান। তার নিজের সন্তানও যেন জিহাদে গিয়ে শহীদ হন_ এমন ইচ্ছার কথাও তিনি লেখেন।
দুই বাংলাদেশিসহ তিন ব্রিটিশ নাগরিকের জেল
প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাস দমন বিভাগের এক পুলিশ সদস্য ফেসবুকে ছদ্ম পরিচয়ে রুনা খানের বন্ধু হন। তিনি সিরিয়ায় জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে রুনা খানের কাছে পরামর্শ চান। রুনা খান ওই কর্মকর্তাকে একটি গোপন পথ বলে দেন। পরামর্শ দেন দুই হাজার পাউন্ড সঙ্গে নিয়ে যেতে। গত সপ্তাহে দ-প্রাপ্ত মোহাম্মদ নাহিদ আহমদের কাছ থেকেই রুনা ফেসবুকে ওই গোপন পথের সন্ধান পান। রুনা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আরো বলেন, তার (রুনা) ১০ হাজার পাউন্ড ঋণ রয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ করে তিনি নিজেও জিহাদে যোগ দেবেন। ওই ঘটনার পর পুলিশ রুনাকে গ্রেপ্তার করে। পরে বিশেষ শর্তে জামিনে ছাড়া পেয়ে তিনি গত ১৪ মাস লুটনে মায়ের বাসায় ছিলেন।
রুনা খানের কারাদ- হওয়ার পর গতকাল রাতে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে বিবিসি নিউজ নাইট। সেখানে রুনা খান দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, তিনি শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মঘাতী হামলাকে সমর্থন করেন। তার মতে, প্রত্যেক নারীর উচিত জিহাদে অংশ নেয়া। গত ১৪ মাস পুলিশ তার পাসপোর্ট আটকে রেখেছে জানিয়ে রুনা বলেন, বসবাসের জন্য যুক্তরাজ্য হচ্ছে তার কাছে সবচেয়ে কম পছন্দের দেশ। তার মতে, যুক্তরাজ্যে শরিয়া আইন না থাকার কারণে অনেক মুসলিম জেলখানার জীবনযাপন করছে।
হিজাব, নিকাব আর বোরকায় ঢাকা রুনা খান যখন এই সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন, তখন এক পাশে বসা ছিলেন ছোট বোন মিনা খান ও মা। মিনা খান তার বোনের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে বিবিসিকে বলেন, 'তার বোন কোনো সন্ত্রাসবাদে অংশ নেননি। তিনি তার বিশ্বাসের কথা বলেছেন মাত্র।'
রুনার এমন কট্টর মনোভাবে অন্যরা কী মনে করবে এমন প্রশ্নের জবাবে দুই বোনের জবাব, কে কী মনে করল, সেটা পাত্তা দেয়ার সুযোগ ইসলামে নেই।