DMCA.com Protection Status
title="৭

যে কোন মুল্যে পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার

দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনা থাকলেও বর্তমান সরকার তার পাঁচ বছর পূর্ণ করার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে কোনো ধরনের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরিকল্পনা নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। ২০১৯ সালে পরবর্তী নির্বাচন আয়োজনের আগ পর্যন্ত যেন বড় কোনো জন-অসন্তোষ তৈরি না হয় সেজন্য প্রস্তুতিও আছে সরকারের।

জনসমর্থন বাড়াতে নেওয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা। আছে স্বল্প সময়েই দৃশ্যমান প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ। সেই সঙ্গে জনজীবনের মূল প্রত্যাশার ক্ষেত্র আইনের শাসন রক্ষায় জিরো টলারেন্সের নীতিও আছে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে ইচ্ছুক সরকারের। জাতীয় সংসদের বাইরের বিরোধী দল ও জোটগুলো আগামী বছর সরকার হটানোর জোর আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিলেও ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন, জনসমর্থন নিয়েই তারা সরকার পরিচালনা করবেন।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, জানুয়ারিতে নির্বাচনের আগে-পরে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রথম বছরটি নির্ঝঞ্ঝাট কাটিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। সর্বশেষ নির্বাচনের বাইরে থেকে সংসদেরও বাইরে চলে যাওয়া বিএনপি তাদের পক্ষে জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি। এ জন্যই বার বার ঘোষণা দিলেও জনগণ সম্পৃক্ত না হওয়ায় সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন দানা বাঁধেনি।

সরকারদলীয় নেতাদের দাবি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের কয়েক মাসে সহিংসতা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্ট জামায়াতের পক্ষ নেওয়ায় বিএনপি দেশের জনগণের বৃহৎ অংশের সমর্থন হারিয়েছে। সেখানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নানান উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে স্পষ্ট পার্থক্য তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। এখন আগের মেয়াদের ভূলভ্রান্তি দূর করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনাই একমাত্র লক্ষ্য।

সেই সঙ্গে আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে পারলেই মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে জোরালো কোনো দাবি উঠবে না। আর দেশের অভ্যন্তরে গণআন্দোলন না থাকলে বিদেশিদের সমালোচনা উপেক্ষা করা কঠিন কিছু হবে না বলে মনে করছেন সরকারদলীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রমতে, মেয়াদ পূর্ণ করতে নেওয়া পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে আছে- পদ্মা সেতু তৈরি করে গাড়ি চলাচল শুরু করা, বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পে উৎপাদন শুরু করা, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আরও কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভার তৈরি করে ঢাকার যানজট নিরসন ও জনচলাচলে স্বস্তি নিয়ে আসা, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, নিম্নবিত্তদের জন্য সুউচ্চ ভবন তৈরি করে আবাসনের ব্যবস্থা করা, রাষ্ট্রীয় সেবাগুলোকে ডিজিটাল করে হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিয়ে ভোগান্তি কমিয়ে আনার মতো ব্যবস্থা। আইনের শাসনের ক্ষেত্রে আলোচিত মামলাগুলোর দ্রুত সুরাহা করার পাশাপাশি সরকার সংশ্লিষ্ট কোনো নেতা বা ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ করা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে বিশেষ দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া।

এ বিষয়গুলোর বাইরে অত্যধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকারের নিয়মিত নিয়মানুগ নির্বাচনের আয়োজন করা। এগুলোতে নির্বাচনপ্রিয় বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করারও পরিকল্পনা আছে সরকারের। আর যে দুটো বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে তা হলো- বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে নানামুখী তৎপরতা চালানো এবং দেশের অর্থনীতির গতি আরও বাড়াতে ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন ছাড় দেওয়া।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ  বলেন, জনগণ আমাদের পাঁচ বছরের জন্য ম্যান্ডেট দিয়েছে। তার একদিন আগেও ক্ষমতা ছাড়ব না। বিএনপির আন্দোলনের হুমকি তাদের ঝিমিয়ে পড়া কর্মীদের চাঙ্গা করার আওয়াজ। আওয়ামী লীগকে এসব হুমকি দিয়ে লাভ নেই, আওয়ামী লীগ এগুলোকে ভয় পায় না। আওয়ামী লীগের শক্তি মাটির শিকড়ে।

সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের  বলেন, দেশের জনগণ পাঁচ বছরের জন্য আমাদের নির্বাচিত করেছে, মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকব। সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে না থাকবে তা নির্ভর করে জনগণের ইচ্ছার ওপর। বিএনপির সঙ্গে দেশের জনগণ নেই। কারণ বিএনপির সহিংসতা, জ্বালাও, পোড়াও মানুষ হত্যার রাজনীতি আর দুর্নীতির কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা উন্নয়ন দিয়ে জনগণের মন জয় করেছি।

আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, বিএনপি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। গত ছয় বছর অনেকবার সরকার পতনের আলটিমেটাম দিয়েছে। এখন তাদের কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। হতাশাগ্রস্ত কর্মীদের চাঙ্গা করতে আন্দোলনের হুঙ্কার দিচ্ছে। কিন্তু সফল হতে পারবে না। কারণ তাদের সে সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন নেই।

একই কথা জানিয়েছেন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের একদিন আগেও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। সরকারের মেয়াদ শেষ হলে সঠিক সময়েই নির্বাচন হবে। তার আগে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। সরকার কাজ করছে দেশের কল্যাণের জন্য কিন্তু বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!