পাকিস্তানের পেশওয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা করেছে জঙ্গিরা। এতে ১৩২ শিশুসহ নিহত হয়েছে ১৪২ জন। আহত হয়েছে আরও শতাধিক। এদের অধিকাংশের অবস্থায়ই গুরুতর।
মঙ্গলবার সকালে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা বন্দুকধারীরা পেশোয়ারের ওয়ারসাক রোডের ওই স্কুলে ঢুকে পড়ে। স্কুলটিতে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী-শিক্ষক ছিল। তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এদিকে তালেবানের বিরদ্ধে সেনাদের অভিযান পর্যবেক্ষণে পেশওয়ারে ছুটে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ।
সেনা কর্মকর্তারা জানান, সকাল ১১টার দিকে সামরিক পোশাক পরে ছয় জঙ্গি স্কুলের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এর পরপরই সেখান থেকে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়।
স্কুলের এক কর্মী ও ছাত্র জিও টিভিকে জানিয়েছে, স্কুলের মিলনায়তনে সকালে একটি সেনাদল ছাত্রদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। এসময় হামলাকারীরা সেখানে ঢুকে পড়ে। তারা সেখানে গোলাগুলি শুরু করলে ছাত্ররা ভয় পেয়ে যার যার ক্লাসে ঢুকে পড়ে। পরে হামলাকারীরা প্রত্যেক ক্লাসে ঢুকে ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়।
হাসপাতাল ও সেনা সূত্র জানিয়েছে, হামলায় এ ১৪১ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩২ জনই শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে আরও শতাধিক। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী কেপি পারভেজ খাট্টাক জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ২৪ জনের মৃতদেহ লেডি রিডিং হাসপাতাল ও ৬০ জনের মৃতদেহ সিএমএইচ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
হামলার পরপর সেনা সদস্যরা স্কুলটি নিরাপত্তা বেস্টনী দিয়ে ঘিরে রাখে। এর কিছুক্ষণ পরই সেনারা স্কুলটিতে ঢুকে পড়ে।
সেনাবাহিনীর বিবৃতি
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেনারা স্কুলের ভেতরে অভিযান চালাচ্ছে। স্কুলের ভেতর থেকে অনেক ছাত্র-শিক্ষককে বের করেও আনা হয়েছে। অভিযান চলাকালে তিন সেনা নিহত হয় বলেও জানিয়েছে তারা।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী শওকত ইউসুফজাই বলেছেন, স্কুলের যে অংশ সিনিয়র ছাত্রদের অনুষ্ঠান চলছিল সেখানেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। ছাত্রদের স্কুল থেকে বের করে আনা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে প্রধানমন্ত্রী
হামলার খবর শুনে দুপুরেই পেশওয়ারে ছুটে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। পেশওয়ারের উদ্দেশে যাওয়ার আগে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘আমি পেশওয়ার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি নিজে অভিযান পর্যবেক্ষণ করবো।’
হামলার দায় স্বীকার
এদিকে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে টিটিপি। দলের মুখপাত্র মুহাম্মদ খোরাসানি জানান, স্কুলে ছয় আত্মঘাতি বোমা হামলাকারিকে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে ছোট শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে বের করে দিয়ে বাকিদের হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, টিটিপি ও উত্তর ওয়াজিরস্তানে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় এর সহযোগীদের ওপর সেনাবাহিনীর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বছরের শুরুতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী টিটিপি ও এর সহযোগীদের বিরুদ্ধে জারব ই জারব নামে অপারেশন শুরু করে। এ পর্যন্ত অভিযানে ১ হাজার ২৭০ জন নিহত হয়েছে।