তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে রয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। প্রধান কয়েকটি দলের ওয়েবসাইট থাকলেও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অধিকাংশ দলেরই ওয়েবসাইট নেই। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে উপস্থিতিও তেমন নেই।
আওয়ামী লীগ ও জামাতের ওয়েবসাইট অনেকটাই হালনাগাদ হলেও বিএনপি-জাতীয় পার্টির ওয়েবসাইটে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। আধুনিকতার তেমন ছোঁয়াও নেই।
আওয়ামী লীগ: ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এর ধারাবাহিকতায় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে পরিবর্তন এসেছে তার ছোঁয়া তাদের দলীয় ওয়েবসাইটে দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটই সবচেয়ে হালনাগাদ ও আধুনিক।আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইট
আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.albd.org-এ বাংলা ও ইংরেজি দুটি ভার্সনই রয়েছে। ওয়েবসাইটে দল ও দলীয় প্রধানের সব খবর নিয়মিতভাবেই দেওয়া হয়। সাইটের মূল পাতায় রয়েছে দলের পরিচিতি, সংগঠন, গণমাধ্যম, প্রকাশনা, চলতি খবর, ডাউনলোড, আর্কাইভ, প্রেসবিজ্ঞপ্তি এবং যোগাযোগের আলাদা বাটন।
পরিচিতি অংশে আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলের অন্যান্য ব্যক্তিত্বের জীবনবৃত্তান্ত, রয়েছে দলের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র এবং ২০০৮ ও ১৩ সালের নির্বাচনী ইশতেহার।
সংগঠন অংশে রয়েছে দলের সভাপতিমণ্ডলী, উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা। দলের সর্বস্তরের নেতাদের আবাসিক ঠিকানা এমনকি মোবাইল ফোন নম্বরও রয়েছে।
গণমাধ্যম অংশে বঙ্গবন্ধু, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। রয়েছে ছবিঘর ও প্রামাণ্যচিত্র। এ ছাড়া পুস্তক-পুস্তিকা, লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, কার্ডও দেখা যাবে সহজেই। ওয়েবসাইটে দলীয় প্রধানের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও গুরুত্বপূর্ণ খবরও দেওয়া আছে।
ফেসবুক, গুগল প্লাস, ইউটিউব ও টুইটারে সক্রিয় দলটি। ফেসবুকে তাদের পেজের লাইক সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬০ হাজার। এটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের ভেরিফায়েড পেজ। টুইটারে নিয়মিতভাবে নানা বিষয়ে টুইট করা হয়। ইউটিউবে নানা ঐতিহাসিক ভিডিওর পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয়েও ভিডিও আপলোড করা হয়।
বিএনপির ওয়েবসাইটঃ অপরদিকে প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে রয়েছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। সম্প্রতি নতুন দলের ওয়েবসাইট তৈরি করেছে তারা। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়নি। সংবাদমাধ্যমে বিএনপির যেসব বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় তাতে www.bnpbd.org ঠিকানার ওয়েবসাইটটির লিংক দিয়ে দেওয়া হয়।
বিএনপির ওয়েবসাইটএ সাইটটি খুললেই শোনা যায় প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ শিরোনামের গানটি। শুরুতেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবির স্লাইড দেখা যায়। আর সাইটের ডিসপ্লেতে রয়েছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের তিনটি লেখা। সাইটে রয়েছে দলের পরিচিতি, সংগঠন, পাঠাগার, আর্কাইভ, গ্যালারি, প্রকাশনা, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, মতামত ইত্যাদি।
প্রচ্ছদে দলের প্রতিদিনের কার্যক্রমের সংবাদও তুলে দেওয়া হয়।
সংগঠন বিভাগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল, কার্যনির্বাহী কমিটি, জেলা কমিটির সদস্যদের তালিকা রয়েছে। পাঠাগার বিভাগে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, ৭ নভেম্বরসহ নানা বিষয়ে লেখা রয়েছে। বিএনপির ওয়েবসাইটগ্যালারিতে রয়েছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি। আর ভিডিওতে এ তিনজনের বক্তব্যসংবলিত ভিডিও।
এর আগে বিএনপির নামে একাধিক ওয়েবসাইট পরিচালিত হতো। গত ২৫ মার্চ লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করলে বিএনপির ওয়েবসাইট বলে পরিচিত একটি সাইট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
ওই সাইটে জিয়াউর রহমানকে দেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করা ছিল। তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ওই ওয়েবসাইট তাঁদের নয়। বিএনপির নিজস্ব অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কখনো ছিল না। এরপর থেকে ওই সাইটটি বন্ধ রয়েছে। এখনো www.bangladeshnationalistparty-bnp.org নামের আরেকটি সাইট ইন্টারনেটে দেখা যায়।
এর বাইরে ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউবে বিএনপির উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
জাতীয় পার্টির ওয়েবসাইট ;জাতীয় পার্টি: সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। তাদের ওয়েবসাইট কোনটি, সে বিষয়ে দলীয় শীর্ষ নেতারাই নিশ্চিত নন। অনলাইনে দুটি ওয়েবসাইট দেখা যায় জাতীয় পার্টির। দুটোই একেবারেই দুর্বল। www.jatiyo-party.com এই
ঠিকানায় ক্লিক করলে দেখা যাবে পুরো পৃষ্ঠাজুড়েই দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তৃতার খবর। এতে যে কারোরই মনে হতে পারে এটি বোধ হয় কোনো সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট।জাতীয় পার্টির ওয়েবসাইট যদিও ওপরের দিকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় পার্টির দলীয় পতাকা রয়েছে। জাতীয় পার্টির ওয়েবসাইটে জাতীয়, ফোরাম, অন্যান্য, প্রতিক্রিয়া, ইতিহাস, সম্পর্কে, ছাত্রসমাজ, যুবসংহতি নামে আলাদা বাটন রয়েছে।
দলের কোনো কমিটির তালিকা ওয়েবসাইটে নেই। এমনকি অফিসের ঠিকানাও নেই।
www.jatiyo-party.org এ শিরোনামের ওয়েবসাইটে গেলে এইচ এম এরশাদের ছবির স্লাইড শো দেখা যাবে। দলের ইতিহাস, প্রতিষ্ঠাকালীন নানা তথ্য রয়েছে। এ সাইটটিও হালনাগাদ নয়।
জামায়াতে ইসলামী: অনেক দলের চেয়ে তুলনামূলক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ওয়েবসাইট রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর। www.jamaat-e-islami.org অনেকটা নিউজ পোর্টালের আদলে গড়া। এ ওয়েবসাইটে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম, ছবি-অডিও-ভিডিও সবকিছুই রয়েছে।
দলটির ওয়েবাসাইটের মূল পাতায় আমাদের সম্পর্কে, সংগঠন, নীতিমালা, নিবন্ধ, চলতি বিষয়াবলি, ইসলামী শিক্ষা, সদস্য হোন, সংবাদ, বিজ্ঞপ্তি, অডিও, ভিডিও, প্রকাশনা ও যোগাযোগ অপশন রয়েছে।
জামায়াত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সক্রিয়। পাশাপাশি দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নানাভাবে সক্রিয় দলটির নেতাকর্মীরা।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের (www.jasod.org.bd) ওয়েবসাইটটি হালনাগাদ
নয়।জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ওয়েবসাইট সাইটিটির হোম পেজে বেশ কিছু পুরোনো সংবাদ ক্লিপিং থাকলেও অন্যান্য বাটনে ক্লিক করলে কিছুই পাওয়া যায় না। পৃষ্ঠা নির্মাণাধীন বলে একটি বার্তা আসে। একই অবস্থা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির (www.bkp-bd.org) ওয়েবসাইটের। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ( www.cpb.org.bd) ওয়েব ঠিকানায় গেলে সার্ভার পাওয়া যায় না। একই অবস্থা বিকল্প ধারা বাংলাদেশের ( www.bikolpdhara.com) ওয়েবসাইটের।